আন্তর্জাতিক ডেস্ক | লিসবন | ৭ নভেম্বর ২০২৫
পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার নিয়মে বড় পরিবর্তন এসেছে। দেশটির সংসদে নতুন নাগরিকত্ব আইন অনুমোদনের মাধ্যমে বিদেশিদের জন্য নাগরিকত্ব অর্জনের মানদণ্ড আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠোর করা হয়েছে।
গত বুধবার অনুষ্ঠিত সংসদীয় অধিবেশনে মধ্য-ডানপন্থী ও অতি-ডানপন্থী এমপিদের ভোটে এ আইনটি পাস হয়। বামপন্থী দলগুলো এর বিরোধিতা করলেও সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে আইনটি অনুমোদিত হয়।
🕐 সময়সীমা বেড়ে ১০ বছর
নতুন আইনে নাগরিকত্ব পাওয়ার ন্যূনতম বৈধ বসবাসের সময়সীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে।
এর অর্থ হলো, এখন থেকে অধিকাংশ আবেদনকারীকে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার আগে পর্তুগালে অন্তত এক দশক ধরে বৈধভাবে বসবাস করতে হবে।
🌐 পর্তুগিজভাষী ও ইইউ নাগরিকদের জন্য আলাদা নিয়ম
তবে কিছু ছাড় থাকবে পর্তুগিজ ভাষাভাষী দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য—
অ্যাঙ্গোলা, ব্রাজিল, কেপ ভার্দে, গিনি-বিসাউ, নিরক্ষীয় গিনি, মোজাম্বিক, সাও টোমে ও প্রিন্সিপে এবং পূর্ব তিমুরের নাগরিকরা এখন ৭ বছর বসবাসের পর নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্রের নাগরিকরাও এই সুবিধা পাবেন।
👶 জন্মসূত্রে নাগরিকত্বেও নতুন শর্ত
নতুন আইনে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিয়মেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এখন থেকে বিদেশি পিতামাতার ঘরে পর্তুগালে জন্ম নেওয়া শিশু কেবল তখনই নাগরিকত্বের যোগ্য হবে, যদি তার অন্তত একজন পিতা বা মাতা দেশে কমপক্ষে ৫ বছর বৈধভাবে বসবাস করে থাকেন।
আগে এই সময়সীমা ছিল মাত্র ১ বছর।
⚖️ রাজনৈতিক বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া
সরকারপন্থী দলগুলো বলছে, এই পরিবর্তন দেশের “সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সাংস্কৃতিক ঐক্য রক্ষায়” জরুরি ছিল।
কিন্তু বিরোধীরা একে অভিবাসী-বিরোধী নীতি বলে অভিহিত করছে।
বামপন্থী দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নতুন আইনটি ইউরোপীয় মানবাধিকার মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং এটি পর্তুগালের ঐতিহ্যবাহী উন্মুক্ত অভিবাসন নীতিকে ক্ষুণ্ন করবে।
📊 পর্তুগালে অভিবাসীদের অবস্থা
বর্তমানে পর্তুগালে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি বিদেশি নাগরিক বৈধভাবে বসবাস করছেন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭%।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক সুযোগ, নিরাপত্তা ও উন্মুক্ত নীতির কারণে দেশটিতে অভিবাসন বেড়েছে।
বিশেষত আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়ার দেশগুলো থেকে অভিবাসীরা পর্তুগালে বসবাস ও নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায় আসছেন।
🔍 বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন আইন কার্যকর হলে নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও জটিল ও দীর্ঘ হবে।
এটি কেবল অভিবাসীদের জন্যই নয়, বরং পর্তুগালের শ্রমবাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তাদের মতে, দেশটির অর্থনীতি বহু বছর ধরে বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল, তাই কঠোর নীতির ফলে শ্রম সংকট দেখা দিতে পারে।
📰 সংক্ষেপে:
নাগরিকত্বের জন্য সময়সীমা: ৫ বছর → ১০ বছর
পর্তুগিজভাষী ও ইইউ নাগরিকদের জন্য সময়সীমা: ৭ বছর
জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের শর্ত: পিতামাতার ৫ বছর বৈধ বসবাস
আইনটি পাস করেছে ডান ও অতি-ডানপন্থী দলগুলো
বিরোধীদের মতে এটি “অভিবাসী-বিরোধী ও বৈষম্যমূলক”
সূত্র: পর্তুগিজ সংসদীয় নথি, ইউরোনিউজ, দ্য পর্তুগাল নিউজ
নিজস্ব সংবাদ : 













